স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে গাবতলী ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ইজারা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) নগর ভবনে ১২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এই ইজারার চেক হস্তান্তর করা হয়। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সাহসী উদ্যোগে এই দুটি বাস টার্মিনাল ইজারা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের আমলে নামমাত্র মূল্যে টার্মিনাল দুটি থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য আদায় সহযোগিতাকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ এক যুগেও এই আদায়ের জন্য নির্ধারিত টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। এছাড়া আদায় সহযোগিতাকারীরা নানা অযুহাত দেখিয়ে ৩১ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকা ডিএনসিসিকে জমা দেননি।
এসব অনিয়ম দূর করার জন্য ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম টার্মিনালগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেন। শুরুতে নানা বাধা-বিপত্তি, হুমকি থাকলেও কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে ডিএনসিসি মেয়রের দৃঢ় নেতৃত্বে ইজারার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
চেক হস্তান্তরের পরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল দুটি থেকে সেভাবে কোনো রাজস্ব আদায় করা যায়নি। আমি এসে দেখেছি এখানে অনেক আগে থেকেই গলদ ছিল। একজনকে আদায়কারীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেখানে একটা ক্লজ ছিল, হরতাল বা বিভিন্ন কারণে যখন পরিবহন বন্ধ থাকবে, তখন ডিএনসিসিকে কোনো টাকা দিতে হবে না। এই সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল। তারা তাদের পাওনা টাকা তো দেয়-ই নাই, বরং সিটি করপোরেশনের কাছে টাকা দাবি করেছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য এই ধরনের অসম চুক্তি করা হয়েছিল। আমি বলেছি এ ধরনের অসম চুক্তি আমরা মেনে নিতে পারি না। এর ফলে সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই আমরা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিয়েছি। আমরা যখন ইজারা দিতে গেলাম, আমাদের কর্মকর্তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছি কারও কথা শোনার দরকার নাই। নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হবে।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত ১২ বছরে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা আদায় করা যেত। এখন ইজারাদারদেরকে বাস টার্মিনালগুলোতে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ইজারা বাতিল হবে। আগের বিশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখা যাবে না। এই যে নতুন সিস্টেম প্রচলন হতে যাচ্ছে, এভাবে আস্তে আস্তে রাজধানীতে পরিবর্তন আসবে।’
১২ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত এক বছরের জন্য লালমাটিয়াস্থ রাফি ট্রেডার্স লিমিটেডকে বাৎসরিক ৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় গাবতলী টার্মিনাল ইজারা দেয়া হয়। এছাড়া এই টার্মিনালের বিদ্যুৎ ও পানির বিল ইজারাদার কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে রাজস্ব আদায়ের উল্লেখযোগ্য খাতসমূহ হচ্ছে- যানবাহনের টার্মিনাল ফি বাস ও মিনিবাস ৫০ টাকা; সিএনজি (ট্যাক্সি) ১০ টাকা; ঠ্যালা গাড়ি, ভ্যান ১০ টাকা; বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত পিক আপ ৩০ টাকা। মূল ভবনের স্থায়ী দোকান প্রতি বর্গফুট প্রতি মাসে পাঁচ টাকা; অস্থায়ী দোকান প্রতি বর্গফুট প্রতি মাসে ২৫ টাকা হারে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ১৫ টাকা ৩৬ পয়সা। ১৫ ও ৩৬ বর্গফুটের অস্থায়ী টোকেনের দোকান মাসিক যথাক্রমে ২২৫ ও ৩৬০ টাকা। মূল ভবনের বাইরে স্থায়ী চা ও ফলের স্টল মাসিক ৭৫০ টাকা; পানের স্টল মাসিক ৫০০ টাকা; খাবারের স্টল মাসিক এক জাচার টাকা। গাড়ি ধোয়ার র্যাম্প মাসিক ছয় হাজার টাকা।