রাসেল আহমেদ: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি বিলের মাঝখানে চারটি সেতু দাঁড়িয়ে আছে। নির্মাণের ১৫ বছর পার হলেও সেতু ব্যবহার করার মত রাস্তা না থাকায় সেতুগুলো ১৫ বছর দাড়িয়ে আছে বিলের মাঝখানে।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের শিবধরা বিল ও ধলিকুড়ি বিলের মাঝখান ২০০৫-২০০৫ সালের অর্থবছরে ইউএসএআইডি দাতা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের অর্থায়নে এই চারটি সেতু তৈরী করা হয়। নির্মিত এসব সেতুর একটি প্রায় ৬৩ ফুট দীর্ঘ। বাকি তিনটির প্রতিটিই ৪৫ ফুট দীর্ঘ।
স্থানীয়রা জানায়, নড়াইল ইউনিয়নের পূর্ব নড়াইল থেকে কাওয়ালিজান গ্রাম ও আশপাশের ৫/৬ থেকে ৬টি গ্রামের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্য এই ব্রীজ গুলো তৈরী করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশন সেতুগুলো নির্মাণ করলেও এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল ইউনিয়ন পরিষদের কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ আদৌও তা করেনি।
পুর্ব নড়াইল গ্রামের বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন ডালী বলেন, চারটি সেতু তৈরী করা হলেও কোনো রাস্তা না করায় ব্রীজগুলো দিয়ে চলাফেরা করা যায় না। এ ছাড়াও বর্ষাকালে বা বন্যার সময় ব্রীজ গুলো তলিয়ে যায়। আর খরার সময় সেগুলো মই ছাড়া উঠার উপায় নাই।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া পরিবারের কেউ বর্ষাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে নৌকায় করে আবার শুকনা মৌসুমে অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঠের চাঙ্গারী বা খাটকি তৈরী করে দুজন কাঁধে নিয়ে হাসপাতালে নিতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, চারটি সেতুর দুইপাশে দুই পাশে শিবধরা বিল, ধলিকুড়ি বিল, টেংরাকুড়ি বিল, নবীন্নাকুড়ি বিল, জাহুর বিল ও আওইরা বিলে বিভিন্ন ফিশারি গড়ে উঠেছে। এই এলাকার কৃষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণির মানুষের চলাচলে এ রাস্তা ব্যবহার করে। কিন্তু সেতু হলেও সড়ক না থাকায় মানুষ আগের দুর্ভোগের মধ্যে আছে। আমরা স্থানীয়রা চাই ব্রীজ গুলো ব্যবহার করার মত রাস্তা যেন হয়।
এ বিষয়ে সুলতান মাহমুদ বলেন, মাত্র দেড় দুই কিলোমিটার রাস্তার জন্য চারটি ব্রীজ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। চেয়ারম্যান মেম্বারাও যদি গত ১৫ বছরে একটু একটু করে মাটি ফেলত তাহলে ব্রীজ গুলো দিয়ে চলাচল করা যেত। খুব জরুরি প্রয়োজনে লোকজনকে তখন কয়েক কিলোমিটার ঘুরে হালুয়াঘাট ও পাশের ফুলপুর উপজেলায় যেতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে স্থানীয় আরেকজন ফজলুল হক নামে এক যুবক বলেন, আমি ছোট কাল থেকেই দেখে আসছি ৪টা ব্রীজ বিলের মাঝখানে এভাবে দাড়িয়ে আছে। এগুলো মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম বলেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন প্রায় ১৫ বছর আগে সেতুগুলো তৈরী করেছিল। তবে, সেতুগুলো নির্মাণে নিয়ম ও ওয়াটার লেভেল মানা হয়নি। যে কারণে ব্রীজগুলো বন্যার সময় তলিয়ে যায়।
ওই বিলের মাঝখানে একটা আইল আছে, কোন সড়ক নাই, সড়ক না থাকার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত বছরে যারা চেয়ারম্যান ছিল। তারা অনেকবার রাস্তা বড় করতে মাটি দিয়েছে। কিন্তু বন্যার সময় আবার তা ভেঙ্গে যায়। তবে, হাওর অঞ্চলে যে সাবমার্সিবল রাস্তা তৈরী করা হয়। সে ভাবে যদি এই রাস্তা তেরী করা যায়। তাহলে হয়তো এই রাস্তা টিকবে।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ব্রীজগুলো কে বা তৈরী করেছে। কোন ডকুমেন্টস আমাদের কাছে নেই। এছাড়াও ব্রীজ গুলো তৈরীর সময় ওয়াটার লেভেল ম্যানটেইন করা হয়নি। যে কারণে ব্রীজ গুলো বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ব্রীজ গুলো মানুষের প্রয়োজনে আসবে, সেভাবেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।